I Love
You
Chumky
ILoveYouChumky.INFO
একদিন সন্ধ্যায়, আমি বসেছিলাম পরিবারের সকলের সঙ্গে। কথা হচ্ছিল ঈদের পরিকল্পনা নিয়ে। হঠাৎ শুনি, এইবার ঈদে কেউই গ্রামে যাবে না। মনে হলো, যেন কেউ হঠাৎ করে বুকের মাঝখানটায় এক টুকরো ভার দিয়ে দিলো। বাবা গ্রামে একা থাকবেন, একা ঈদের সকালটা কাটাবেন? এই চিন্তায় মনটা ভার হয়ে এলো। একটা অজানা ব্যথা বুকের গভীরে থরথর করে কেঁপে উঠলো।
তারপর কথা বললাম তার সঙ্গে — সেই মানুষটার, যার ভালোবাসা দিনে দিনে হৃদয়ের শিকড় ছুঁয়ে যাচ্ছিল। বললাম, “তুমি জানো, আমার বাবা আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। আমি যদি যেতেও না পারি, একলাই গ্রামে চলে যাবো। ওকে একা রাখা যাবে না।” সে বললো না কিছুই, শুধু একটা গভীর বোঝার আলো ওর কথায় ঝরে পড়লো — ও আমাকে সমর্থন করলো।
জানি না কীভাবে বোঝাবো, ওকে যখন লিখছিলাম এই কথা গুলো, চোখের কোনা ভিজে যাচ্ছিলো নীরবে। কিন্তু সে? সে যেন আমার সেই জলভেজা লেখার ভাষা পড়ে নিলো চোখ বুজেই। কীভাবে পারতো এমন করে সবটা বুঝতে? সেই মুহূর্তে, আমি অনুভব করলাম— আমি ভালোবেসে ফেলেছি। নয়, ভালোবাসা নয়—আমি ডুবে গেছি ওর মধ্যে।
সেই রাতেই আমি ওকে অনেকবার বললাম— “জান, আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি।” ও উত্তর দিলো— “আমি-ও তোমাকে ভালোবাসি, জামাই।” উফফ... কী মোহময় ছিল সেই কথাগুলো। মনে হচ্ছিলো, ভালোবাসা যেন শব্দ হয়ে মুখে নয়, হৃদয়ে উচ্চারিত হচ্ছিল।
এরপরের দিন, আমি তাকে বললাম— “তোমাকে অনেক কিছু বলতে চাই। তবে এখন নয়। বলবো ২৭ রমজানের রাতে—শবে কদরে।” সে বললো— “সেই দিনটাই কেন?” আমি বললাম— “কারণ আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখবো। ওই রাতেই আমি সব বলবো—আমার সমস্ত সত্য, সমস্ত প্রেম, সমস্ত মানত।”
সে বললো— “না না, এখন বোলো না প্লিজ।” সেই সময় থেকেই আমি তৈরি হচ্ছিলাম। আমি চাইছিলাম, আল্লাহর ঘরে বসে, তার নাম নিয়ে বলি— “তোমাকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি।” আমি চাইছিলাম, নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে বলি— “এই মেয়েটিই হোক আমার জীবনের আলো, আমার সহযাত্রী।” আমি ঠিক করেছিলাম, তিনবার তার নাম নিয়ে কবুল বলবো। তারপর খুলে বলবো আমার জীবনের সব না বলা অধ্যায়—শৈশব থেকে কৈশোর, পরিবার থেকে আত্মপরিচয় পর্যন্ত সব কথা।
এভাবেই আসলো ২৬ রমজান। সারারাত কথা বলেছি ওর সঙ্গে। একটুও ঘুমাইনি। সকালে গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি। ওকে বললাম— “জান, এখন ৬টা। তুমি ৮:৩০-এর দিকে আমাকে কল দিও। এখন ভাইয়া আসছে, আমি রাখি।”
আমাদের কথা মতো, আমি রওনা দিলাম। তবে লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ৯টা বেজে গেছিলো। ও মেসেজ দিয়েছিলো, আমি দেখতে পাইনি। সেদিন ছিল সেই প্রতীক্ষিত রাত—২৭ রমজান।
লঞ্চে উঠেই ওর আরেকটা মেসেজ এলো দুপুর ১২টার দিকে। সকালবেলা কল দিয়ে ও আবার ঘুমিয়ে গেছিলো। আমি বললাম— “বাবু, আজ তোমাকে খুব মিস করেছি।” ও বললো— “সরি গো, ঘুমিয়ে গেছিলাম।” আমি বললাম— “কোনো সমস্যা নেই।”
তারপর বিকেলের দিকে গ্রামে পৌঁছলাম। রাত এলো, নামাজের সময়। আমি শবে গুছল করে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে গেলাম। কিছু নামাজ পড়ে ভাইয়া বললো— “চল, বাসায় গিয়ে একটু খেয়ে আসি।” ফিরে এসে দেখি রাত প্রায় ১০টা।
আমি আবার বেরোতে চাইছিলাম, কিন্তু আত্মীয়ের বাসা, অচেনা পরিবেশ—এত রাতে একা বেরোনো কেমন দেখাবে? লজ্জাও লাগছিল। তাই আর গেলাম না। ও জিজ্ঞেস করলো— “কি গো, তুমি না কি বলবে বলেছিলে? বললা না তো?” আমি বললাম— “জান, বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় পাচ্ছি না।”
ও বললো— “থাক, দরকার নেই। অন্য কোনোদিন বলো।” আমি মনে মনে ভাবলাম— “বাবুটা কতটা বুঝদার! আমার পরিস্থিতিটা ঠিক বুঝে নিয়েছে।” কিন্তু আজ যখন ভাবি... সেই রাতেই তো বলা উচিত ছিল! ও সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। হয়তো মুখে বলেনি, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে আঘাত লেগেছিল।
সেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ও ফেসবুক থেকে গল্প পড়ে পড়ে আমাকে শুনাচ্ছিলো। আমি ফোন বুকের ওপর রেখে, আইরবাড কানে লাগিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়েছিলাম। একসময় ঘুম এসে আপন করে নিলো। আমি প্রতিজ্ঞা করেও কথা রাখতে পারিনি।
এটা, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। একটা ভুল যার ক্ষমা হয়তো কখনোই নেই।
কিন্তু তারপরও, সেই রাত থেকে আমাদের সম্পর্ক আরও গাঢ় হতে থাকে। আরও গভীর, আরও নিবিড়—এমনভাবে, যেন আমরা জন্ম-জন্মান্তরের জন্য একে অপরেরই।